Saturday, July 23, 2016

তৃণমূলে বেনোজল ঢুকছে...

        ২০১১ সাল। মমতা ব্যানার্জী তখনো মুখ্যমন্ত্রী  হননি। চারিদিকে দিদি রব। এবার দিদি আসছেনই। দিদি আসছেন ধরে নিয়ে কিছু লোক, নেতা বা মন্ত্রী (মতান্তরে সুবিধাবাদী)  অন্যদল থেকে তৃণমূলে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন। এবং তাদের ফুলমালা, মুখমিষ্টি  করে দলীয় পতাকা হাতে তুলে দিয়ে সাদরে গ্রহণ করাও হচ্ছিল। সেই  ব্যাপারটা নিয়ে আমি বর্তমান  মুখ্যমন্ত্রী  মাননীয়া  মমতা ব্যানার্জীকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম খানিকটা এই বয়ানে-(সেই চিঠি 'সংবাদ প্রতিদিন' এ ছাপা হয়েছিল)
     মাননীয়,
         বাংলার অগ্নিকন্যা, ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা দি,
কিছুদিন  আগেই যাদের চালচলন,  হাবভাব, ঐশ্বর্য ও বৈভব দেখে মনে হয়েছিল এরা আর যা হোন এরা সর্বহারা হতে পারেননা।  তাই, আপনার দেওয়া স্বজনপোষণকারী,  দুর্নীতিবাজ, শোষক ও হার্মাদই এদের উপযুক্ত  উপাধি। কিন্তু,  আজ তারা দলে দলে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। এবং ফুলমালা ও দলীয় পতাকা দিয়ে স্বাগত  জানানো  হচ্ছে! তবে, আমরা যারা এ লাল বাঙলাকে সবুজ বাঙলা দেখবো বল স্বপ্ন  দেখছি সেই সবুজ বাঙলায় কি তবে, এখন থেকেই কর্দমাক্ত বেনোজল  ঢুকতে শুরু করলোনা?
     মমতা ব্যানার্জী উত্তরে বলছিলেনঃ "এ নিয়ে আপনি এতো ভাববেননা। আমি সুব্রত  বক্সীকে এ বিষয়ে নজর রাখার নির্দেশ  দিয়েছি"।
বিশ্বাস  করুন আমি কিন্তু,  সত্যি  আর ভাবিনি। আর মাননীয়  সুব্রত বক্সী  বাবু কতটা নজর রেখেছেন তাও জানিনা। তবে, দ্বিতীয়বার বাঙলা সবুজাভ হবারপর অন্যদল  থেকে তৃণমূলে যোগ দেবার যেন হিড়িক পড়ে গিয়েছে। তারই জ্বলন্ত  উদাহরণ ৩৫ বছর বামেদের দখলে থাকা 'জঙ্গীপুর পৌরসভার' পৌরপিতা সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ  জনপ্রতিনিধি ২১ শে জুলাই ২০১৬ শহীদ স্মরণে তৃণমূলে যোগদান করলেন। বাকীরাও শীঘ্র  যোগ দেবেন। ব্যাপারটা যতটানা আনন্দের ততটাই দুশ্চিন্তারও বটে। কারণ,
১) সবাই  যদি তৃণমূল  হয়ে যাবেন তবে, বিরোধী  থাকবেন কে? কেননা, শক্তিশালী বিরোধী ছাড়া গণতন্ত্র  ভয়ঙ্কর?  একারণেই যে, সি পি আই এম তৃণমূল  হলো। রইলো দোসর  কংগ্রেস কিন্তু, তাদের অবস্থাও তো তথৈবচ। তবে কী অশুভ শক্তির উত্থান? যাদের উদ্দেশ্যই হচ্চে মেরুকরণ  করে নিজেদের  আধিপত্ত বিস্তার  করা। যদিও এ বাঙলা সেই মেরুকরণের ফাঁদে পা দেয়নি কোনদিন।
২) পুরনো  তৃণমূল  ও নতুন তৃণমূলের দ্বন্দ্ব  তো সর্বজন বিদিত। তার উপর গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত নতুন যে সব প্রতিনিধি  অন্যদল থেকে যোগ দিলেন তারা পুরনো তৃণমূল, নতুন তৃণমূল ও নব্য তৃণমূলের সাথে কতটা সমঝোত করে চলতে পারেন সেটা সময়ই বলবে।
৩) দুদিন আগেও যারা অন্য দলের সাধারণ সদস্য  বা ছোটখাটো  কোন পদে ছিলেন  তারা তৃণমূলে যোগ দিয়েই বলছেন আমি ব্লক সভাপতি।  যদি আপনারা সবাই  পদাধিকারী হবেন তবে, দলে সাধারণ সদস্য কে থাকবেন? আর কার কথা কে শুনবেন?
৪) এক দলের হয়ে জনগণের রায় নিয়ে পাশ করে সুযোগ বুঝেই সেই রায় নিয়ে অন্য দলে যোগদান কতটা গণতান্ত্রিক  তা নিয়ে আমার সন্দেহ  আছে! কারণ, যে দলের বিরুদ্ধে আমি ভোট দিয়েছি আবার তাদেরই কথা মতো চলতে হবে বা প্রয়োজনে তাদের কাছেই যেতে হবে এটা কী আমাদের মুখবুজে মেনে নিতে হবে? কেননা, কদিন আগেই  দিদি ঘোষণা করেছেন চাইলেই তৃণমূলে যোগ দেওয়া যাবেনা। তাকে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির পরীক্ষায় উক্তীর্ণ হতে হবে। অতএব, আশাকরি  দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি এই বেনোজল  ঢুকার আগে শক্তপোক্ত  বাঁধ দেবেন। নইল সে জল একদিন ভয়ঙ্কর  হয়ে উঠবে।

Thursday, July 14, 2016

আজ আমাদের প্রথম এনিভার্সরী।

              তখন একাদশে পড়ি। এক স্কুল সহপাঠিনীর বিয়েতে যেন প্রথমবার দেখলাম 'ওকে' (আমার প্রেয়সী ও বর্তমানে আমার সহধর্মিনী)। যদিও ছোট বেলাই ওর সঙ্গে খেলাধূলাও করেছি। মিঠিপুর কিশোর বাহিনীতে। তখন, ঐ মিঠিপুর ফুটবল মাঠখানা আমাদের কাছে সব পেয়েছির আসর ছিল। কিন্তু, সেসব কী ঘোড়ার ডিম মনে আছে আর। নীল চুড়িদারে যেন নীলপড়ি মনে হচ্ছিল "ওকে"। মনে মনে ভাবছিলাম ইস্... এই মেয়েটির সাথে যদি প্রেম করতে পারতাম! বা এই মেয়েটি যদি আমায় প্রেম নিবেদন করত কিনা সুখে দিন কাটত আমার। কত মেয়েই তো প্রেম প্রস্তাব দেয়। যদিও ঐ মেয়েটি আমার কাছে এসে প্রেম নিবেদন করেছিল একদিন কিন্তু, আমার দিন সুখে কাটেনি। যদিও ততদিনে আমার প্রতি মোহ কাটিয়ে স্কুল সহপাঠিনী বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। আর একদম ছোট্ট বেলাই যার প্রতি আমার ইনফ্যচুয়েশন তৈরী হয়েছিল তার রেস কিন্তু কয়েক বছর ছিল। তাই, হইত বিয়ের পিঁড়িতে বসা স্কুল সহপাঠিনীকে মেনে নিতে পারিনি। যদিও অনেকের ই বিশ্বাস বিয়ের পিড়িতে বসা সেই সহপাঠিনী ও আমার মধ্যে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, নাহ আমার প্রতি তার অগাধ ভালবাসা থাকলেও আমি কোন দিন তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াইনি। কারণ, অল্প বয়সে দাগা খাওয়ার যন্ত্রণায়। তাছাড়া বান্ধবীর বাবা তৎকালীন বামপন্থি বড় মাপের নেতা ও আমাদের স্কুলের অঙ্কের স্যার ছিলেন। আর আমি ছিলাম কঙ্কে অষ্টোরম্ভা। তাই, ভয় করতাম খুব, তারপর, ভুলেগেছি সেসব কথা। নিজের নিজের লেখাপড়ায় মন দিয়েছি। আমি তখন গিরিয়া জুনিয়ার হাই স্কুলের ফার্স্ট বয়। (লোকে বলত গাধাদের মধ্যে ফাস্ট বয়) তাছাড়া, হাতের লেখা ও আকাঁযোকায় সুনাম ছিল বলে আশপাশের স্কুলের প্রায় সব ছেলেমেয়ে চিনত। সে মেয়েটিও( প্রেয়সী) তো চিনতই। পরে একদিন বলেছিল যে, সে নাকি মনে মনে অনেক খুঁজেছে আমায়। কিন্তু, ততদিনে স্কুলের গণ্ডিপেরিয়ে কলেজে। গোটা কয়েক কলেজসঙ্গী জুটেছে আমার সঙ্গে ঐ মেয়েটিও। এইভাবে চলতে চলতে কখন যে ভাল লাগার চোরা স্রোতে কাটতে থাকে দুজনের মন খেয়াল ছিল না! এই চোরা স্রোতে আমি ই কাটতে থাকি বেশী। কাটতে কাটতে একদিন আমার আর অবশিষ্ঠ ছিলনা কিছু। তবু, অপেক্ষায় ছিলাম যদি চড়া পড়ে কোনদিন। কিন্তু, নাহ এ চোরা স্রোত একদিন বিরাট আকার ধারণ করে আমার সমস্থ হৃদয় চূর্ণবিচূ্র্ণ করে দুকূল ভাসিয়ে দিয়েছিল। এবং সে স্রোতের বীপরিত দিকে চলে গেছিল। আমি তখন হৃদয়টাকে পাথরে রুপান্তরীত করেছিলাম। কিন্তু, রক্ত মাংসে গড়া তো তাই, আমার এ হৃদয়টা হতে রক্ত ঝড়ছিল খুব। আমি আমার মধ্যে ছিলাম না। আমি যেন নেই রাজ্যের বাসিন্দা হয়েগিয়েছিলাম। সেদিন আমার মা-বা, দাদা-দিদি, ভাই-বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নী, দু একজন বন্ধু সব্বাই খড়কুটোর মত সাহারা দিয়েছিল এবং আমি বেঁচে ফিরেছিলাম। কিন্তু অব্যাক্ত যন্ত্রনার প্রবল ঢেউ এ হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বারবার। তাই, একূক ওকুল দুকূল ভেঙ্গেছে আমাদের। অবশেষে, দুকূল ছাপান জল আবার তার লক্ষে সাগরে গিয়ে মিসেছে। এখন আর কোন চোরা স্রোত নেই, নেই কোন উথাল পাথাল করা ঢেউ। এখন নয়ন মেললে পূ্র্ণিমার চাঁদের আলোয় বয়ে চলে এক শান্ত, স্নিগ্ধ, নয়নাভিরাম নদী আর কান পাতলে শোনা যায় শুধু কুল কুল শব্দ। কখনও বা কোকিলের কুহু কুহু...

Monday, July 11, 2016

যানজট না প্রাণজট?

          জঙ্গীপুর ভাগীরথী  সেতু থেকে শ্রীকান্তবাটী পর্যন্ত  যানজটে নিত্যদিন  নাকাল রঘুনাথগঞ্জ তথা গোটা জঙ্গীপুরবাসী। কানাগলি  থেকে রাজপথ  কী গ্রাম কী শহর সর্বত্র  পথ যেন সাপের ছুঁচো গেলার প্রাণপণ চেষ্টা। সবাই  আগে যাবেন তাতে হোক অবৈধ প্রবেশ!  হাতে গোনা কটা সিভিক রোদ, বৃষ্টি আর জনজোয়ারে ক্লান্ত  এই চাপ রোধের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রশাসন  বা পৌরসভার কোন নতুন পরিকল্পনা দেখা যায়না। তারপর, ভ্যানো, ন্যানো, আর অবৈধ অটোতে মানুষের পথ ক্ষানিকটা ছোট করলেও বাড়িয়েছে বিড়ম্বনা।  যত্রতত্র, বেআইনী ভাবে, গাড়িপার্কিং, যাত্রী  ওঠানামা ও পাল্লাদিয়ে যাত্রী  তোলার ফলে বাড়ছে নানান সমস্যা। তাছাড়া, পথদখল করে হাজারও ফেরিওয়ালা আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ  করছেন। আর সব কিছুতেই শুধু প্রশাসন  বা পুলিশের মুণ্ডছেদ  করা আমাদের মূদ্রাদোষ। আসলে আমরাও যে অতি ছ্যাঁচড়  বান্দা সেটা বেমালুম ভুলে যায়। বাড়ি করবো সরকারি  জায়গায়  আর নিজের জায়গা পড়ে থাকবে পেছনে। দোকান নিজের যায়গাতে করলেও সিঁড়িটা করবো কিন্তু রাস্তায়, গ্রাহক দাঁড়ালে বা সাইকেল, গাড়ীটা  নিয়ে দাঁড়াবেন কিন্তু,  ঐ রাস্তায় তবে আমরা যাবো কোথা দিয়ে? কিন্তু, প্রশাসন  বা পৌরসভা ব্যবস্থা নিতে পারলেও নিবেননা যদি, পাছে ভোটটা হারায়।

Saturday, July 9, 2016

আমি সবুজ হলাম কীভাবে?

কীভাবে সবুজ  হলাম?
আমি তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করেছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে একদিন প্রধান শিক্ষক  মহাশয়  তোরাবুদ্দীন
ডেকে জানতে চাইলেন আমার নাম কী? আমি অবধারিত ভাবে বললাম আমার নাম 'ফাইব'। আমার নাম শুনে প্রধান শিক্ষক  সহ সহকারী শিক্ষকরা কেমন  যেন মুখ ভেংচে বলেছিলেন  কেমন নামরে? তোর ভালো নাম কী? একই উত্তর বলেছিলাম। তাই,  স্যার বলেছিলেন, বাড়ি থেকে জেনে আসতে। বাড়ি  ফিরে মাকে জিজ্ঞেস  করেছিলাম আমার আসল নাম কী মা? মা বলতেন, বংশের সব ছেলের নামকরণ  নাকী আমার দাদু করতেন কিন্ত, দাদু আমার নামকরণ করেননি, মারা গিয়েছিলেন তাই, তোর আসল নাম নেই  একটাই নাম ফাইব।  স্কুলে গেলে স্যার আবার জিজ্ঞেস করতেন তোর আসল নাম কী? স্যারের জিজ্ঞেস করতেন  এই কারনে যে, আমি নাকী  মাথায় বড় হয়েছি প্রথম শ্রেণিতে নাম উঠবে। কিন্তু স্যার আমাকে যতবার জিজ্ঞেস করতেন আমি একই উত্তর  দিতাম। এই করে মা একদিন বললেন তোর স্যরদের বলবি নাম রেখে দিতে। স্যার কে একথা জানালে উনারা বললেন আমরা আবার কী নাম রাখবো? আমি পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। তাই, এ বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে আমি প্রধাণ শিক্ষা  মহাশয়কে দেখলেই  লুকিয়ে  পরতাম। কিন্তু, নিজেই এর সুরাহা করলাম। আমি নিজেই নিজের নাম খুঁজতে থাকি, ইমদাদুল, সাহাদাৎ আরও কত কী আজ আর মনে নেই? তবে, যেটা মনে মনে নির্বাচন  করলাম সেটা হল, 'হাসিবুল'। সেটা আমার এক বড় জ্যাঠার ছোট ছেলের নাম। তখন মনে কী যে হলো সেই নাম রেখে স্যারকে বললাম আমার নাম হাসিবুল। স্যার সেদিন আমাকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি  করলেন ও তিনি নিজেই একটা জন্মদিন  দিয়ে দিলেন। বাড়ির কেউ  জানলোনা একই বাড়িতে বাড়ছে দুটো  হাসিবুল। আমি তখন বড় হয়েছি, নবম শ্রেণিতে নাম রেজিস্ট্রেশনেও একটা ভুল হয়ে গেল, বংশানুক্রমে দাদু বা বাবার 'বিশ্বাস' উপাধি বাদ রয়েগেল। তা নিয়ে আবার নিজের সঙ্গে শুরু হলো যুদ্ধ।  প্রথমে নাম নিয়ে পরে পদবী  নিয়ে এ এক অব্যক্ত যুদ্ধ।  বছর কয়েক আগে 'জঙ্গীপুর ম্যাজিস্ট্রেট  কোর্টে' আইনগত ভাবে, বিশ্বাস পদবিধারী হলাম। তখন নবম কী দশমে পড়ি সাহিত্য নেশা পেয়ে গেল। ক্লাসের পড়া ফেলে সারাদিন কবিতা, গল্প ও উপন্যাস  পড়ে যায়। আমার ভাগ্নেভাগ্নি  ছোট আমার নাম ধরে ডাকতে পারেনা তাই,  ওরা আমার নাম দিল "পড়া"(মামা)। সেই নাম পারিবারিক  নাম হিসেবে আজও প্রচলিত। সাহিতা চর্চা করতে করতে একদিন ভাবলাম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়  হবো কারণ, তারঁ জীবনী  আমাকে পাগল করে তুলেছিল। সেই সময়, জানতে পারলাম সুনীলের ছদ্দনাম 'নীললোহিত' এবং সব লেখকদের ছদ্দনাম আছে কাজেই, আমারও একটা ছদ্দ নাম চাই। ব্যাস,  সেই  সময় নাকী একাদশ ও দ্বাদশে আবার নিজের ছদ্দনাম রাখলাম 'সবুজ বিশ্বাস' সেই থেকে চলছে। মূলত "আকাশবাণী  কলকাতার" রেডিওর সাহিত্য বিভাগ দিয়ে লেখালেখি  শুরু। তারপর, এখানে ওখানে, বর্তমানে ফেসবুক বা আমার ব্লগে (http.//sabujdiary.blogspot.com) কীসব ছাইভস্ম লিখি। যাক সেকথা, সেই ছদ্দনামের সূত্রধরে ফেসবুকেও আমার নাম সবুজ বিশ্বাস (যদিও বিস্তারিত  সব আছে)। তবে, এখানে, আমার ছদ্দনাম আর ছদ্দনাম রইলনা। আমাকে এখন ফেসবুকের দৌলতে সবাই সবুজ নামেই চেনে/চেনেন। সম্প্রতি নতুন যুদ্ধ  শুরু হয়েছে, আবার নাম বদল, এবার সবুজ বিশ্বাস  হতে হবে, আইনি পরামর্শ  বা প্রক্রিয়া  চলছে...

Friday, July 8, 2016

বাবাহীন ঈদ

'বাবাহীন ঈদ'
বাবা গতকাল তোমার ছোট্ট মেয়ে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিলো, সবাই এসেছে? সবাই বলতে এখন শুধু সেজদা আর ছোট। মেজদা তো আর ইদানীংকালে বাইরে যায়না। বাবা তুমি ঠিকই বলেছিলে যে, তুমি ছাড়া ওরা একদিন ওখানে টিকতে পারবেনা। সত্যি পারেনি বাবা। ওরা এখন সবাই এখান ওখান করে। যাক, তোমার ছোট মেয়েকে বললাম হ্যাঁ সবাই এসেছে কিন্তু, তুমি যে আসোনি এটা বলতে পারলামনা। বললে, হইত তেমার ছোট মেয়েটা হাইমাই করে কাঁদত। আমি ওকে কাঁদাতে চাইনি বলে চুপি চুপি আমিও কান্নাটা চেপে গেলাম বাবা। তুমি ভাবছো আমরা তোমায় ভুলে গেছি তোমার খোঁজ নিইনা। কিন্তু, বিশ্বাস করো ঈদের আগে দিন এখনো ভোর বেলাই উঠে তোমার চটিজুতা জোড়া লক্ষ্য করি। কারণ, অনেক রাত পর্যন্ত, আমি, মাসু, আর ছোট তোমার পথ চেয়ে চেয়ে কখন যেন, ঘুমিয়ে পরতাম। তারপর, তোমার ঘরের দরজার বাইরে তোমার চটিজুতোয় প্রমাণ দিত যে তুমি বাড়ি এসেছো। কেমন একটা শিহরণ, ভয়, শ্রদ্ধা ও আবেগ কাজ করত মনে। কিন্তু, এখন, এত সদস্য বা সদস্যার চটি আর জুতোয় বাইরের বারান্দাটা ভরে ওঠে কিন্তু, তোমারটা আর চোখে পরেনা। তোমার চটির কথা বলতে গিয়ে মনে পরে যাচ্ছে, শেষদিন যেদিন তোমাকে রাতে সদর হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছিলাম তোমার সেই চটি পরতে না পারার দৃশ্যটা। তোমাকে বাড়ির সবাই ধরে আছি আর তোমাকে বলছি বাবা চটিটা পরো, চটিটা পরে নাও কিন্তু, তুমি কিছুতেই পাটা গলাতে পারছিলেনা। আমরা জোর করে চটিটা পরিয়ে দিয়ে তোমাকে হাটাচ্ছিলাম কিন্তু, কখন যে তোমার পা থেকে এক পাটি চটি খুলে গেছে খেয়াল নেই! আরেক পাটি অ্যাম্বুলেন্স এ ছিল। কিন্তু, ভোর হতেই সবাই খোঁজ পেয়ে গেছে তুমি ভালো নেই হাসপাতালে ভর্তি আছো। সেই খবরের সূত্রধরে তুমি যাকে খুব ভালোবাসতে আশিয়া বড়মা তোমার একপাটি চটি ঐ কোন রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আমাদের বাড়িতে দিয়েছিল। সেই চটি বাবা অনেকদিন জোগিয়ে রেখে ছিলাম। একদিন আর সহ্য হলোনা বাবা। তোমাকে মনে পরলেই আমাদের যেন বইতে কষ্ট হচ্ছে তাই, ভুলে যাবার বাহানায় তোমার চটি জোড়া দিলাম ফেলে। কিন্তু, যে চটি জোড়া তোমাকে মনে পরাতো সেটা ফেলে দিয়েও কী সত্যি ভুলতে পেরেছি বাবা? না আজও পারিনি। আচ্ছা বাবা তুমি কি ওখানে চটি পড়ো? কী চটি বাবা? ঈদের আগে রাতে ঘুম আসেনা। একটা চটিগুলো ফেলোতো বুকে জরিয়ে ধরে শুবো...