কীভাবে সবুজ হলাম?
আমি তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করেছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে একদিন প্রধান শিক্ষক মহাশয় তোরাবুদ্দীন
ডেকে জানতে চাইলেন আমার নাম কী? আমি অবধারিত ভাবে বললাম আমার নাম 'ফাইব'। আমার নাম শুনে প্রধান শিক্ষক সহ সহকারী শিক্ষকরা কেমন যেন মুখ ভেংচে বলেছিলেন কেমন নামরে? তোর ভালো নাম কী? একই উত্তর বলেছিলাম। তাই, স্যার বলেছিলেন, বাড়ি থেকে জেনে আসতে। বাড়ি ফিরে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার আসল নাম কী মা? মা বলতেন, বংশের সব ছেলের নামকরণ নাকী আমার দাদু করতেন কিন্ত, দাদু আমার নামকরণ করেননি, মারা গিয়েছিলেন তাই, তোর আসল নাম নেই একটাই নাম ফাইব। স্কুলে গেলে স্যার আবার জিজ্ঞেস করতেন তোর আসল নাম কী? স্যারের জিজ্ঞেস করতেন এই কারনে যে, আমি নাকী মাথায় বড় হয়েছি প্রথম শ্রেণিতে নাম উঠবে। কিন্তু স্যার আমাকে যতবার জিজ্ঞেস করতেন আমি একই উত্তর দিতাম। এই করে মা একদিন বললেন তোর স্যরদের বলবি নাম রেখে দিতে। স্যার কে একথা জানালে উনারা বললেন আমরা আবার কী নাম রাখবো? আমি পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। তাই, এ বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে আমি প্রধাণ শিক্ষা মহাশয়কে দেখলেই লুকিয়ে পরতাম। কিন্তু, নিজেই এর সুরাহা করলাম। আমি নিজেই নিজের নাম খুঁজতে থাকি, ইমদাদুল, সাহাদাৎ আরও কত কী আজ আর মনে নেই? তবে, যেটা মনে মনে নির্বাচন করলাম সেটা হল, 'হাসিবুল'। সেটা আমার এক বড় জ্যাঠার ছোট ছেলের নাম। তখন মনে কী যে হলো সেই নাম রেখে স্যারকে বললাম আমার নাম হাসিবুল। স্যার সেদিন আমাকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করলেন ও তিনি নিজেই একটা জন্মদিন দিয়ে দিলেন। বাড়ির কেউ জানলোনা একই বাড়িতে বাড়ছে দুটো হাসিবুল। আমি তখন বড় হয়েছি, নবম শ্রেণিতে নাম রেজিস্ট্রেশনেও একটা ভুল হয়ে গেল, বংশানুক্রমে দাদু বা বাবার 'বিশ্বাস' উপাধি বাদ রয়েগেল। তা নিয়ে আবার নিজের সঙ্গে শুরু হলো যুদ্ধ। প্রথমে নাম নিয়ে পরে পদবী নিয়ে এ এক অব্যক্ত যুদ্ধ। বছর কয়েক আগে 'জঙ্গীপুর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে' আইনগত ভাবে, বিশ্বাস পদবিধারী হলাম। তখন নবম কী দশমে পড়ি সাহিত্য নেশা পেয়ে গেল। ক্লাসের পড়া ফেলে সারাদিন কবিতা, গল্প ও উপন্যাস পড়ে যায়। আমার ভাগ্নেভাগ্নি ছোট আমার নাম ধরে ডাকতে পারেনা তাই, ওরা আমার নাম দিল "পড়া"(মামা)। সেই নাম পারিবারিক নাম হিসেবে আজও প্রচলিত। সাহিতা চর্চা করতে করতে একদিন ভাবলাম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হবো কারণ, তারঁ জীবনী আমাকে পাগল করে তুলেছিল। সেই সময়, জানতে পারলাম সুনীলের ছদ্দনাম 'নীললোহিত' এবং সব লেখকদের ছদ্দনাম আছে কাজেই, আমারও একটা ছদ্দ নাম চাই। ব্যাস, সেই সময় নাকী একাদশ ও দ্বাদশে আবার নিজের ছদ্দনাম রাখলাম 'সবুজ বিশ্বাস' সেই থেকে চলছে। মূলত "আকাশবাণী কলকাতার" রেডিওর সাহিত্য বিভাগ দিয়ে লেখালেখি শুরু। তারপর, এখানে ওখানে, বর্তমানে ফেসবুক বা আমার ব্লগে (http.//sabujdiary.blogspot.com) কীসব ছাইভস্ম লিখি। যাক সেকথা, সেই ছদ্দনামের সূত্রধরে ফেসবুকেও আমার নাম সবুজ বিশ্বাস (যদিও বিস্তারিত সব আছে)। তবে, এখানে, আমার ছদ্দনাম আর ছদ্দনাম রইলনা। আমাকে এখন ফেসবুকের দৌলতে সবাই সবুজ নামেই চেনে/চেনেন। সম্প্রতি নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আবার নাম বদল, এবার সবুজ বিশ্বাস হতে হবে, আইনি পরামর্শ বা প্রক্রিয়া চলছে...
Saturday, July 9, 2016
আমি সবুজ হলাম কীভাবে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment