তখন একাদশে পড়ি। এক স্কুল সহপাঠিনীর বিয়েতে যেন প্রথমবার দেখলাম 'ওকে' (আমার প্রেয়সী ও বর্তমানে আমার সহধর্মিনী)। যদিও ছোট বেলাই ওর সঙ্গে খেলাধূলাও করেছি। মিঠিপুর কিশোর বাহিনীতে। তখন, ঐ মিঠিপুর ফুটবল মাঠখানা আমাদের কাছে সব পেয়েছির আসর ছিল। কিন্তু, সেসব কী ঘোড়ার ডিম মনে আছে আর। নীল চুড়িদারে যেন নীলপড়ি মনে হচ্ছিল "ওকে"। মনে মনে ভাবছিলাম ইস্... এই মেয়েটির সাথে যদি প্রেম করতে পারতাম! বা এই মেয়েটি যদি আমায় প্রেম নিবেদন করত কিনা সুখে দিন কাটত আমার। কত মেয়েই তো প্রেম প্রস্তাব দেয়। যদিও ঐ মেয়েটি আমার কাছে এসে প্রেম নিবেদন করেছিল একদিন কিন্তু, আমার দিন সুখে কাটেনি। যদিও ততদিনে আমার প্রতি মোহ কাটিয়ে স্কুল সহপাঠিনী বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। আর একদম ছোট্ট বেলাই যার প্রতি আমার ইনফ্যচুয়েশন তৈরী হয়েছিল তার রেস কিন্তু কয়েক বছর ছিল। তাই, হইত বিয়ের পিঁড়িতে বসা স্কুল সহপাঠিনীকে মেনে নিতে পারিনি। যদিও অনেকের ই বিশ্বাস বিয়ের পিড়িতে বসা সেই সহপাঠিনী ও আমার মধ্যে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, নাহ আমার প্রতি তার অগাধ ভালবাসা থাকলেও আমি কোন দিন তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াইনি। কারণ, অল্প বয়সে দাগা খাওয়ার যন্ত্রণায়। তাছাড়া বান্ধবীর বাবা তৎকালীন বামপন্থি বড় মাপের নেতা ও আমাদের স্কুলের অঙ্কের স্যার ছিলেন। আর আমি ছিলাম কঙ্কে অষ্টোরম্ভা। তাই, ভয় করতাম খুব, তারপর, ভুলেগেছি সেসব কথা। নিজের নিজের লেখাপড়ায় মন দিয়েছি। আমি তখন গিরিয়া জুনিয়ার হাই স্কুলের ফার্স্ট বয়। (লোকে বলত গাধাদের মধ্যে ফাস্ট বয়) তাছাড়া, হাতের লেখা ও আকাঁযোকায় সুনাম ছিল বলে আশপাশের স্কুলের প্রায় সব ছেলেমেয়ে চিনত। সে মেয়েটিও( প্রেয়সী) তো চিনতই। পরে একদিন বলেছিল যে, সে নাকি মনে মনে অনেক খুঁজেছে আমায়। কিন্তু, ততদিনে স্কুলের গণ্ডিপেরিয়ে কলেজে। গোটা কয়েক কলেজসঙ্গী জুটেছে আমার সঙ্গে ঐ মেয়েটিও। এইভাবে চলতে চলতে কখন যে ভাল লাগার চোরা স্রোতে কাটতে থাকে দুজনের মন খেয়াল ছিল না! এই চোরা স্রোতে আমি ই কাটতে থাকি বেশী। কাটতে কাটতে একদিন আমার আর অবশিষ্ঠ ছিলনা কিছু। তবু, অপেক্ষায় ছিলাম যদি চড়া পড়ে কোনদিন। কিন্তু, নাহ এ চোরা স্রোত একদিন বিরাট আকার ধারণ করে আমার সমস্থ হৃদয় চূর্ণবিচূ্র্ণ করে দুকূল ভাসিয়ে দিয়েছিল। এবং সে স্রোতের বীপরিত দিকে চলে গেছিল। আমি তখন হৃদয়টাকে পাথরে রুপান্তরীত করেছিলাম। কিন্তু, রক্ত মাংসে গড়া তো তাই, আমার এ হৃদয়টা হতে রক্ত ঝড়ছিল খুব। আমি আমার মধ্যে ছিলাম না। আমি যেন নেই রাজ্যের বাসিন্দা হয়েগিয়েছিলাম। সেদিন আমার মা-বা, দাদা-দিদি, ভাই-বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নী, দু একজন বন্ধু সব্বাই খড়কুটোর মত সাহারা দিয়েছিল এবং আমি বেঁচে ফিরেছিলাম। কিন্তু অব্যাক্ত যন্ত্রনার প্রবল ঢেউ এ হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বারবার। তাই, একূক ওকুল দুকূল ভেঙ্গেছে আমাদের। অবশেষে, দুকূল ছাপান জল আবার তার লক্ষে সাগরে গিয়ে মিসেছে। এখন আর কোন চোরা স্রোত নেই, নেই কোন উথাল পাথাল করা ঢেউ। এখন নয়ন মেললে পূ্র্ণিমার চাঁদের আলোয় বয়ে চলে এক শান্ত, স্নিগ্ধ, নয়নাভিরাম নদী আর কান পাতলে শোনা যায় শুধু কুল কুল শব্দ। কখনও বা কোকিলের কুহু কুহু...
No comments:
Post a Comment