Friday, July 8, 2016

বাবাহীন ঈদ

'বাবাহীন ঈদ'
বাবা গতকাল তোমার ছোট্ট মেয়ে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিলো, সবাই এসেছে? সবাই বলতে এখন শুধু সেজদা আর ছোট। মেজদা তো আর ইদানীংকালে বাইরে যায়না। বাবা তুমি ঠিকই বলেছিলে যে, তুমি ছাড়া ওরা একদিন ওখানে টিকতে পারবেনা। সত্যি পারেনি বাবা। ওরা এখন সবাই এখান ওখান করে। যাক, তোমার ছোট মেয়েকে বললাম হ্যাঁ সবাই এসেছে কিন্তু, তুমি যে আসোনি এটা বলতে পারলামনা। বললে, হইত তেমার ছোট মেয়েটা হাইমাই করে কাঁদত। আমি ওকে কাঁদাতে চাইনি বলে চুপি চুপি আমিও কান্নাটা চেপে গেলাম বাবা। তুমি ভাবছো আমরা তোমায় ভুলে গেছি তোমার খোঁজ নিইনা। কিন্তু, বিশ্বাস করো ঈদের আগে দিন এখনো ভোর বেলাই উঠে তোমার চটিজুতা জোড়া লক্ষ্য করি। কারণ, অনেক রাত পর্যন্ত, আমি, মাসু, আর ছোট তোমার পথ চেয়ে চেয়ে কখন যেন, ঘুমিয়ে পরতাম। তারপর, তোমার ঘরের দরজার বাইরে তোমার চটিজুতোয় প্রমাণ দিত যে তুমি বাড়ি এসেছো। কেমন একটা শিহরণ, ভয়, শ্রদ্ধা ও আবেগ কাজ করত মনে। কিন্তু, এখন, এত সদস্য বা সদস্যার চটি আর জুতোয় বাইরের বারান্দাটা ভরে ওঠে কিন্তু, তোমারটা আর চোখে পরেনা। তোমার চটির কথা বলতে গিয়ে মনে পরে যাচ্ছে, শেষদিন যেদিন তোমাকে রাতে সদর হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছিলাম তোমার সেই চটি পরতে না পারার দৃশ্যটা। তোমাকে বাড়ির সবাই ধরে আছি আর তোমাকে বলছি বাবা চটিটা পরো, চটিটা পরে নাও কিন্তু, তুমি কিছুতেই পাটা গলাতে পারছিলেনা। আমরা জোর করে চটিটা পরিয়ে দিয়ে তোমাকে হাটাচ্ছিলাম কিন্তু, কখন যে তোমার পা থেকে এক পাটি চটি খুলে গেছে খেয়াল নেই! আরেক পাটি অ্যাম্বুলেন্স এ ছিল। কিন্তু, ভোর হতেই সবাই খোঁজ পেয়ে গেছে তুমি ভালো নেই হাসপাতালে ভর্তি আছো। সেই খবরের সূত্রধরে তুমি যাকে খুব ভালোবাসতে আশিয়া বড়মা তোমার একপাটি চটি ঐ কোন রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আমাদের বাড়িতে দিয়েছিল। সেই চটি বাবা অনেকদিন জোগিয়ে রেখে ছিলাম। একদিন আর সহ্য হলোনা বাবা। তোমাকে মনে পরলেই আমাদের যেন বইতে কষ্ট হচ্ছে তাই, ভুলে যাবার বাহানায় তোমার চটি জোড়া দিলাম ফেলে। কিন্তু, যে চটি জোড়া তোমাকে মনে পরাতো সেটা ফেলে দিয়েও কী সত্যি ভুলতে পেরেছি বাবা? না আজও পারিনি। আচ্ছা বাবা তুমি কি ওখানে চটি পড়ো? কী চটি বাবা? ঈদের আগে রাতে ঘুম আসেনা। একটা চটিগুলো ফেলোতো বুকে জরিয়ে ধরে শুবো...

No comments:

Post a Comment